বেপরোয়া নিধনে বৃক্ষহীন নগরী হওয়ার শঙ্কায় নগরবাসী।

এক সময় সিলেট নগরীকে প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে শান্তির নগরী বলা হতো। নগরের অভ্যন্তরে আনাচে-কানাচে ছিল অগণন বৃক্ষ। নগর ছিল অনেকটা সবুজে আচ্ছাদিত। কিন্তু সময়ে সময়ে নগর হারিয়েছে সবুজ। উন্নয়নের নামে কাটা পড়েছে অগণন গাছ। হিসাব অনুযায়ী, শেষ পাঁচ বছরে বছরপ্রতি ১০০টি করে গাছ কেটেছে সিসিক। পরিবেশকর্মীরা আন্দোলন, অনুনয়, অনুরোধ করলেও সিসিকের শ্রমিকদের করাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শতবর্ষী কিংবা চারা গাছ। মানা হচ্ছে না নিয়ম। এমন অবস্থায় আগামীর সিলেট নগরী বিরানভূমিতে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। অপরদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার দাসের মতে, যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হচ্ছে তাতে বড় গাছ ছাড়া বাঁচা সম্ভব না। সম্প্রতি শরৎকালে ভাদ্রের গরমের অন্যতম একটি কারণই ছিল বৃক্ষনিধন। সে ক্ষেত্রে নগর উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান করে নগর বনায়নের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সিলেট নগরীতে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাটা পড়েছে ২৬২টি গাছ। যার অধিকাংশই পরিপক্ব। অবশ্য সিসিকের এ হিসেবের পরেও অগণন গাছ কাটা পড়লেও সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি হচ্ছে নগরীর উপকণ্ঠ উপশহর আবাসিক এলাকায়। ওই এলাকায় সম্প্রতি ড্রেন নির্মাণের নামে অনুমতি ছাড়াই প্রায় ২২২টি গাছ কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ হিসেব দাঁড়ায় ৪৮২টি। কাটার অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় শতাধিক গাছ। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের হিসাব অনুযায়ী শেষ পাঁচ বছরে অন্তত সাত শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে নগরীতে। কিন্তু তালিকা তৈরি করা হয়েছে ‘সুবিধামতো’। যার প্রমাণও মিলেছে সিসিক থকে প্রাপ্ত শেষ পাঁচ বছরের দেওয়া এক তালিকায়। গেল বছরের নভেম্বর মাসে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের অভ্যন্তর থেকে বিনা প্রয়োজনে পুরোনো দুটি কদম গাছ কেটে ফেলা হলেও এ দুটি গাছের তথ্য নেই সিসিকের তালিকায়। তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানের দাবি, যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে তার বিপরীতে গাছ লাগানো হচ্ছে আরো বেশি। শেষ পাঁচ বছরে গাছ লাগানোর একটি তালিকাও করেছে সিসিক। মার্চ মাস পর্যন্ত পাওয়া এ তালিকায় যেসব গাছ লাগানো হচ্ছে তার অধিকাংশই শোভাবর্ধন জাতের। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার দাসের মতে, একটি পরিপক্ব গাছের বিপরীতে রাধাচূড়া গাছ কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। তিনি বলেন, যেসব গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে সেসব গাছ লাগাতে পারলেই কিছুটা সমন্বয় হতে পারে। তা না হলে এসব গাছ কিছুদিন পর মারা যাবে। তখন সংকট তৈরি হবে। সিসিকের তালিকা অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পাঁচ বছরে কাটা গাছগুলোর মধ্যে বাগবাড়ি পিডিবি মসজিদ থেকে পেছনের মুখ পর্যন্ত ৭১টি, মীরের ময়দান থেকে ব্লু বার্ড স্কুল পর্যন্ত ৪০টি, ক্বিনব্রিজ থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত ৬৪টি, বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের শতবর্ষী ১টি গাছ, বঙ্গবীর রোড থেকে সিফাত উল্লাহ জামে মসজিদ পর্যন্ত ২২টি, শাহী ঈদ্গাহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে থেকে ১৮টি, ধোপাদিঘির দক্ষিণ পাড় থেকে ৬টি, মানিক পীরের টিলা থেকে ২৬টি, কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড় এলাকা থেকে ২টি ও আম্বরখানা থেকে চৌকিদেখি পর্যন্ত ১৩টি গাছ কাটা হয়েছে। সর্বশেষ সিসিকের ড্রেন নির্মাণের নামে করাত চলেছে উপশহর আবাসিক এলাকার ‘ডি’ ব্লকের ৩১ নম্বর এবং ১৪ নম্বর সড়ক, সি ব্লকের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর সড়কের গাছে। এসব সড়ক সপ্তাহখানেক আগেও সবুজে আচ্ছাদিত থাকলেও এখন বিরানভূমি