ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে ভবনের আয়তন কমবে, বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম।

প্রস্তাবিত ড্যাপ (২০১৬-৩৫) এবং সংশ্লিষ্ট খসড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়িত হলে ভবনের আয়তন বর্তমানে যা অনুমোদন হচ্ছে তা থেকে কমপক্ষে ৩৩ থেকে ৫৩ শতাংশ আয়তন হ্রাস পাবে। ফলে বেড়ে যাবে ফ্ল্যাটের দাম, অধরা থেকে যাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের স্বপ্ন। ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সাধারণ ক্রেতা ও জমির মালিকসহ আবাসন ব্যবসায়ীরা। যা নাগরিকদের মাঝে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। রোববার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মতামত তুলে ধরেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা। অনুষ্ঠানে রিহ্যাব এর ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ লায়ন শরীফ আলী খানসহ বিভিন্ন পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব এর কথা উল্লেখ করে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্মিতব্য ভবনের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি, দাপ্তরিক ও অন্যান্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যয় সমূহ একই থাকার কারণে ফ্ল্যাট সমূহের মূল্য নুন্যতম ৫০% বৃদ্ধি পাবে যার ফলশ্রুতিতে ক্রেতাগণের ক্রয় ক্ষমতা যৌক্তিকভাবে কমে যাবে এবং “আবাসন” সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যহত হবে। এছাড়াও ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের ফলে সিরামিক, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ সহ অন্যান্য ২৬৯ টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ সমূহ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে, সর্বোপরি আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি অশনি সংকেত রূপে দেখা দিবে। উদাহরণ দিয়ে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, পূর্বে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ মোতাবেক ২০ফিট রাস্তা সংলগ্ন ৫ কাঠা জমিতে সর্বনিম্ন গ্রাউন্ডফ্লোর সহ ৮ তলা ফ্লোর বিশিষ্ট ভবনে মোট ১৩,৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত, প্রস্তাবিত বিধিমালা মোতাবেক ৫ তলা ফ্লোর বিশিষ্ট মোট ৯ হাজার বর্গফুট ভবন নির্মাণ এর অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুট এর চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে নির্মিতব্য ভবনের উচ্চতা ৩/৪ তলার বেশী হবে না এবং আয়তন উদ্বেগজনক ভাবে হ্রাস পায়। এরূপ চিত্র প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। প্রস্তাবিত বিধির নির্দেশনার কারণে জমির মালিকগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিবে উল্লেক করে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, নির্মাণ যোগ্য ফ্ল্যাট সংখ্যা সমূহ কমে আসার কারণে বাসা ভাড়া সীমাহীন ভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন স্থানে সাবলেট সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যা নগরীতে একটি অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তিনি। অন্যান্য নগরীতে ৫০ থেকে ৫৩ শতাংশ ভবনের আয়তন হ্রাস করার কারণে আবাসনের চাহিদা মেটাতে ফসলী জমিতে ভবন তথা বাসাবাড়ীর নির্মাণের একটি প্রবনতা সৃষ্টি হবে, যার কারণে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার সংকট দেখা দিবে, যা হবে জাতির জন্য একটি বিরাট বিপর্যয়। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত ৭ই মার্চ ২০২১ তারিখে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ড্যাপ সম্পর্কীত একটি সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ড্যাপ রিভিউ কমিটির আহবায়ক মাননীয় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম রিহ্যাব ও বিএলডিএ এর মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিলেন। অদ্যাবধি এই ওয়ার্কিং কমিটির কোন সভা ডাকা হয়নি এমনকি স্টেক হোল্ডারদের কোন সুপারিশও গ্রহণ করা হয়নি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্টেক হোল্ডারদের পাশ কাটিয়ে, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান এর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম কতটুকু সাফল্য আনবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।