বদলে যাচ্ছে ইয়াবার রং ও রুট, তিনজন গ্রেপ্তার

রাজধানীতে আট লাখ ৪৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান চক্রের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১ এর সদস্যরা।
স্থলপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি ও তৎপরতার কারণে সমুদ্রপথে ইয়াবা চোরাকারবারিদের নতুন রুট হয়েছে। এই রুটে পুরোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নতুন ব্যবসায়ী যুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব। ইয়াবা ব্যবসায় বিদেশি কয়েকজন ব্যক্তি বিনিয়োগ করেন বলেও জানিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে সদরঘাটের বরগুনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সপ্তবর্ণা-১ লঞ্চ থেকে ৫ লাখ ৫ হাজার ইয়াবাসহ তুহিন হোসেন (২৫) ও মো. সবুজকে (২৬) গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মো. শাহজাহানকে (৩৫) ৩ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের স্থলপথে র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকায় এই রুটে মাদক পাচার করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য। তাই তারা সমুদ্রপথে ইয়াবা পাচার করার চেষ্টা করছিল। পোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই চালানটি জব্দ করা হয়।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ইঞ্জিনচালিত মাছধরার নৌকায় ইয়াবা নিয়ে গভীর সমুদ্রে চলে যায়। এরপর বাংলাদেশি গ্রুপটি মাছধরা নৌকায় করে ইয়াবা নিয়ে আসে। একসময় তারা টেকনাফ, কক্সবাজার এলাকায় নৌকা নিয়ে আসতো। তবে ধরা পড়ার ভয়ে তারা এখন সমুদ্রপথে নৌকা নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায় চলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তারা ইয়াবা একটি নিরাপদ স্থানে উঠিয়ে রাখে। এরপর সেখান থেকে সময় সুযোগে লঞ্চে করে বাহক দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।
এই চালানটি ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় পাঠানোর চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু তার আগেই তারা ধরা পড়ে যায় বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মাদকের সরবরাহ শূন্য হয়েছে, এটা আমরা কখনও বলিনি। এখনও চালান আসছে। আমরাও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, আটক, জব্দ করছি। বর্তমানে বেশিরভাগ চালান নৌরুটে আসছে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মাদক ব্যবসায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ইয়াবার টাকা পরিশোধ করে তারপর নিয়ে আসতে হয়। বিদেশ থেকে কয়েকজন ব্যক্তি মাদকে বিনিয়োগ করে থাকে।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আজ ধরা পড়া চালানটি আনতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দুটি বড় বোট ভাড়া করেছিল। তারা পটুয়াখালী থেকে ভুট্টা নিয়ে আসার আড়ালে ইয়াবা নিয়ে আসতো। কিন্তু তারা পরে আবার তরমুজ চালান আনার কথা ভাবছিল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় তারা লঞ্চে করে ইয়াবা নিয়ে আসে।
র্যাবের তথ্যমতে, এই চক্রটি এর আগেও পাঁচ-ছয়টি চালান নিয়ে এসেছে। তারা এক বছর ধরে নৌপথে ইয়াবা পাচার করছে। আজ জব্দ করা ইয়াবার দাম প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বাংলা নববর্ষকে টার্গেট করে তারা ইয়াবাগুলো ঢাকায় নিয়ে আসছিল। আটক তুহিন এই চক্রটির চালান পাচারের মূল সিদ্ধান্তদাতা ছিল। সে-ই ইয়াবা ঢাকায় প্রবেশ করানোর কৌশল করেছে। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার ছবিপুর এলাকায়। তুহিনের প্রলোভনে পড়ে সবুজ টাকার বিনিময়ে লঞ্চে ইয়াবা বহনে রাজি হন। তার গ্রামের বাড়িও মুলাদী। শাহজাহান সরকার ইয়াবা পাচার করার সময় আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়। তার গ্রামের বাড়িও ওই একই ঠিকানায়। এই গ্রুপের সঙ্গে আট-দশজন মাদক ব্যবসায়ী জড়িত। প্রতি ছয়-সাত মাস পরপর তারা পাঁচ-সাত লাখ ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে আসে।
মাদকে নতুন ব্যবসায়ী জড়িত হওয়ার বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, দ্রুত বেশি টাকা আয় করার একটা প্রলোভন থাকে বলে মাদক ব্যবসায় জড়িত হয় অনেকে। র্যাব প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, ইয়াবা পাচার ও পরিবহনের সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোর ট্রলার মালিকদের একটি অংশ জড়িত।