জাতিসংঘের রিপোর্ট: রাখাইনে গণহত্যায় জড়িত বার্মিজ সেনারা

মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছেন বার্মিজ সেনারা। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে, জাতিসংঘের তদন্তকারী দল। সেনাপ্রধানসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পদত্যাগসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি জানান তারা। তবে, শুধু বিবৃতি নয়; দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দেখতে চান, নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে গেল বছর আন্তর্জাতিক স্বাধীন তদন্ত কমিটি করে, জাতিসংঘ।
সোমবার জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে, তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে এই কমিটি। নির্যাতনের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাড়ে আটশোর বেশি মানুষের সাক্ষাতকার, স্যাটেলাইট ইমেজ, ভিডিও ও ছবির ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, বার্মিজ সেনারা। কাচিন ও শান রাজ্যেও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত তারা।
আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য রাধিকা কমারাস্বোয়ামি বলেন, ‘শুধু হত্যা ও নির্যাতন নয়; রাখাইনে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাপ্রধানসহ ৬ কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাই।’
রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায়; মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিরও সমালোচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য রাধিকা কমারাস্বোয়ামি আরও বলেন, ‘শুধু সেনাবাহিনীই নয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ফোর্স ও বর্ডার গার্ড পুলিশও মানবতাবিরোধী এই অপরাধে জড়িত। ক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও এ সব বন্ধে কোন কার্যকর উদ্যোগই নেননি সুচি।’
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বার্মিজ সেনাদের অবজ্ঞা গোটা বিশ্বের জন্য সতর্কবার্তা।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারযুকি দারুসমান বলেন, ‘মানবতা, স্বাধীনতা আর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মিয়ানমার সেনারা যে অবজ্ঞা দেখিয়েছেন, তা দেশটির জনগণসহ বিশ্ববাসীর জন্য চিন্তার বিষয়।’
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য স্ক্রিস্টফার সিদোতি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিদ্যমান আইন ও বিচারিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের কোন অন্যায়ের বিচার হয় না সেখানে। তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দরকার।’
শুধু বিবৃতি নয়, দোষীদের বিচার দেখতে চান, নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
কোনো বিবৃতিতে বিশ্বাস রাখতে পারছি না। এখন পর্যন্ত দোষীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালয়ে নেয়া যায়নি। তাই ন্যায় বিচারও মেলেনি।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা ও ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ ২০ বার্মিজ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে, ফেসবুক।