বিনাপুঁজিতে লাভ পেয়ে ইয়াবা থেকে ‘আইস’-এ ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা

গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন কিংবা ইয়াবা ঠেকাতে রীতিমত যখন হিমশিম খাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ঠিক তখনি নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। অতীতের সব মাদককে ছাড়িয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে এটি। দেশে উচ্চশ্রেণির মাদকসেবীদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। ইয়াবার চেয়েও অন্তত ৩০ গুণ শক্তিশালী হওয়ায় এই মাদককে নেশাগ্রস্তরা যেমন নিজেদের পছন্দের শীর্ষে রেখেছে, তেমনি লাভের দিক থেকে অন্যান্য মাদকের তুলনায় এই মাদকে লাভ বেশি হওয়ায় মাদক কারবারিরাও এখন ইয়াবা থেকে এই মাদকে ঝুঁকছে। কারণ এই মাদক পাচার করার কাজ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত দেশীয় কারবারিদের অগ্রিম কোনো টাকা দিতে হয় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে মাদক পাচার করতে পারলে লাভের অংশ পায় দেশীয় মাদক কারবারিরা। ফলে বিনাপুঁজিতে কোটি টাকা আয়ের নতুন পথ পেয়েছে মাদক কারবারিরা। মাদক দ্রব্য অধিদফতর বলছে, ইয়াবা তৈরির মূল কাঁচামাল হচ্ছে এমফিটামিন। এটি ইয়াবায় থাকে মাত্র পাঁচ ভাগ। অন্যদিকে ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। অর্থাৎ ইয়াবা তৈরির মূল যে কাঁচামাল সেটিই আইস। তাই ইয়াবার তুলনায় আইসের প্রতিক্রিয়া ২০-৩০ গুণ বেশি হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কেমিক্যাল, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস এবং ইয়াবা ভিন্ন হলেও দুটোই মাদক হিসেবে ভয়ংকর। ইয়াবায় যে পরিমাণ এমফিটামিন থাকে, সে তুলনায় আইসে প্রায় ৯৮ শতাংশ বেশি থাকে এমফিটামিন। তাই আইসকে বলা হয় ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল। নিরাপত্তার বাহিনীর একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় বর্তমানে অন্য সব মাদকের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় মাদক আইস। এর মূল কারণ, অভিজাত শ্রেণির নেশাগ্রস্তরা, টাকা নয়, কতো বেশি নেশাসক্ত হতে পারে সেটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যে কারণে বেশি টাকা ব্যয় হলেও তারা আইস সেবন করে। তাদের এই চাহিদাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা নিচ্ছে ইয়াবার কারবারিরা। আইসে ইয়াবার তুলনায় ১৫-২০ গুণ অর্থ লাভ হয় বলে ইয়াবা কারবারিরাও এখন ইয়াবা থেকে আইসে মনোযোগ বাড়াচ্ছে। অপর একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আইস পাচারে জড়িতদের ৯০ ভাগ ইয়াবার কারবারি। এই কারবারিরা রাজত্ব গড়েছে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার এলাকায়। এই কারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার করার কারণে মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত। তারা এই কারবারিদের হাতেই কোটি কোটি টাকার আইস তুলে দিচ্ছে বিনাপুঁজিতে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- আইস যেহেতু ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল, তাই এর মাধ্যমে যদি দেশেই ইয়াবা তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয় তাহলে বিপর্যয় বাড়বে। এজন্য গোয়েন্দা সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে কোনো ইয়াবার কারখানা রয়েছে কিনা সেটির অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।