যে গ্রামে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে সবাই

উত্তর কাজাখস্তানের দু’টি গ্রাম কালাচি ও ক্রাস্নোগরস্ক। রাশিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে অবস্থিত গ্রাম দু’টি। ২০১৩ সালের মার্চ মাসের দিকে হঠাৎ করে গ্রামের অনেকে তাদের জীবনে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করে।
হঠাৎ অদ্ভুত রকমের ঘুম পাচ্ছিল গ্রামের অনেকেরই। রাস্তার পাশে বসে থাকা অবস্থায়ও অনেকে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। যারা কর্মস্থলে ছিল তারা কর্মস্থানের টেবিলে ঘুমিয়ে পড়ছিল। দু’টি গ্রামেরই প্রায় দেড়শো জন মানুষ এই অদ্ভুত ঘুমের ব্যাধিতে ভোগেন।
যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তারা তাদের চোখ খুলে রাখতে পারছিলো না এবং যারা এভাবে আকস্মিক ঘুমিয়ে পড়ছিল তারা ঘুম থেকে জাগার পর কিছুই মনে রাখতে পারছিল না।
গ্রামের এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটি পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে একে ‘ফাঁপা ঘুম’ নামে ডাকা শুরু করলো।
‘কমসোলস্কায়া প্রাভতার’ নামক রুশ একটি পত্রিকার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশু থেকে শুরু করে গ্রামের সকল বয়সের মানুষদের ওপর এই ঘুমের ব্যাধিটি প্রভাব ফেলেছিলো। ব্যাধিটি শিশুদের মধ্যে প্রচন্ডভাবে বেড়েই চলছিলো যার কারনে বাবা-মা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
ধীরে ধীরে বিভিন্ন জীবজন্তু এবং পশুপাখি সহ নারী পুরুষ সবাই এই রহস্যজনক ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে শুরু করে।
কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন নড়ে বসে। সাত হাজারের বেশি মানুষের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। দলগুলো বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা চালায়।
কিছু গবেষণার পর গ্রামের পাশে একটি ইউরেনিয়াম এর খনি পাওয়া যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় খনিটি বেশ সমৃদ্ধ ছিলো।
তবে গবেষকরা নিশ্চিত ছিলেন যে ইউরেনিয়াম খনিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে শুরু করেছে। গবেষনার এক পর্যায়ে তারা নিশ্চিত হন যে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও আশেপাশে এর প্রভাব রয়ে গিয়েছিলো।
ওই অঞ্চলের বাতাসের ঘনত্ব পরীক্ষার পর তারা জানান, যে খনিজ পদার্থগুলই ওই এলাকার কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের বাড়ার কারন।
এদিকে এর প্রভাবে অঞ্চলটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রচন্ডভাবে হ্রাস পাচ্ছিলো। একারণে স্থানীয় লোকজন সামান্য পরিশ্রম করেই হাপিয়ে উঠছিলো।